ঢাকা ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরের সুপারির বাম্পার ফলন চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্রি হচ্ছে

বাংলাদেশ কণ্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৬ বার পঠিত

বাংলাদেশ কন্ঠ ।।

মুশফিকুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার:
উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। চাষিরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন বাড়ছে সুপারি উৎপাদন। তাই এইবার জেলায় সুপারির সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে এবার লক্ষ্মীপুরে সুপারির ফলন হয়েছে কম, তবে দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি হওয়ায় বাগানীরা বেশ খুশি। অর্থকরী লাভজনক এ ফসল উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় সুপারি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে। প্রতি বছর সুপারির আবাদ বাড়ছে যেমনি তেমনি বাগানীদেরও উন্নত জাত নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে বেশ। এ জেলার উৎপাদিত সুপারি বেশী সুস্বাদু হওয়ায় লক্ষ্মীপুরবাসীর চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার মে. টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ৭শ কোটি টাকারও বেশী বলে জানায় কৃষি বিভাগ। এদিকে সুপারি উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মানুষ নতুন নতুন সুপারি বাগান তৈরিতে ঝুঁকছেন। চারা রোপনের ৫-৬ বছরে ফলন আসে। সামন্য পরিচর্চায় বছরের পর বছর ফলন পেতে শুরু করেন বাগানীরা। জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে, পার্বতিননগর, বিজয়নগর, সোনাপুর,  সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়।  সদর উপজেলার হাজিরপাড়া  গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিন  মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’ পোদ্দার বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী হারুন মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।  সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের সুপারি চাষি তারেক ও আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। মনোহরপুর গ্রামের দিপু  জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।লক্ষ্মীপুরজেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে উৎপাদিত সুপারি দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও বিখ্যাত। বন্যা না থাকলে সুপারির আরো ভালো ফলন হতো। এদিকে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামছুদ্দিন ফিরোজ জানান, বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার সুপারি উৎপাদন কম হয়েছে, তবে দাম বেশি হওয়ায় চাষীরা খুশি। চলতি বছর ৩৬ হাজার মেট্রিক টন সুপারির উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মুল্য ৭শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে বাগানীরা তাদের বাগানে সার প্রয়োগ, পরিচর্চা আর উন্নত চারা লাগানোর পরামর্শ দেন এ কর্মমকর্তা।
ট্যাগস :

লক্ষ্মীপুরের সুপারির বাম্পার ফলন চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্রি হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৩:৪৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ কন্ঠ ।।

মুশফিকুর রহমান,স্টাফ রিপোর্টার:
উপকূলীয় অঞ্চল লক্ষ্মীপুর জেলা সুপারির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। চাষিরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন বাড়ছে সুপারি উৎপাদন। তাই এইবার জেলায় সুপারির সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে এবার লক্ষ্মীপুরে সুপারির ফলন হয়েছে কম, তবে দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি হওয়ায় বাগানীরা বেশ খুশি। অর্থকরী লাভজনক এ ফসল উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় সুপারি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে। প্রতি বছর সুপারির আবাদ বাড়ছে যেমনি তেমনি বাগানীদেরও উন্নত জাত নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে বেশ। এ জেলার উৎপাদিত সুপারি বেশী সুস্বাদু হওয়ায় লক্ষ্মীপুরবাসীর চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার মে. টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ৭শ কোটি টাকারও বেশী বলে জানায় কৃষি বিভাগ। এদিকে সুপারি উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই এ অঞ্চলের মানুষ নতুন নতুন সুপারি বাগান তৈরিতে ঝুঁকছেন। চারা রোপনের ৫-৬ বছরে ফলন আসে। সামন্য পরিচর্চায় বছরের পর বছর ফলন পেতে শুরু করেন বাগানীরা। জেলার সদর ও রায়পুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি চাষ হয়। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা ও পাশের জমিতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরের দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, রায়পুর, হায়দরগঞ্জ, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারি, দত্তপাড়া ও দিঘলি বাজারে, পার্বতিননগর, বিজয়নগর, সোনাপুর,  সবচেয়ে বেশি সুপারি কেনাবেচা হয়।  সদর উপজেলার হাজিরপাড়া  গ্রামের সুপারির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিন  মিয়া বলেন, ‘এবার সুপারির ফলন অন্য বছরের তুলনায় কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি। এবার ব্যবসা গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হচ্ছে।’ পোদ্দার বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী হারুন মিয়া জানান, তিনি চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রাকে করে পাঠিয়ে থাকেন। এবার বিভিন্ন জেলায় সুপারির চাহিদা বেশি এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।  সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের সুপারি চাষি তারেক ও আলম জানান, বন্যায় তার চাষ করা আউশ-আমন ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পোলট্রি ফার্ম পানিতে তলিয়ে লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এতে তিনি চরম অর্থসংকটে পড়েন। বর্তমানে সুপারি বিক্রি করে তিনি পরিবারের অর্থসংকট দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। মনোহরপুর গ্রামের দিপু  জানান, দিনমজুরি করে চারজনের সংসার চালান। বন্যার কারণে তিনি পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারে জীবনযাপন করেছেন। বর্তমানে তার বাড়ির আঙিনায় গাছে অনেক সুপারি ধরেছে। ওই সুপারি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। এতে পরিবার অর্থসংকট দূর হয়েছে। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘সুপারি একটি লাভজনক চাষ। একবার সুপারি গাছ লাগানোর পর ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সুপারি গাছে খুব বেশি সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। পতিত ও উচ্চজমিতে সুপারি চাষ হয়। সুপারি গাছ পানিসহিষ্ণু হওয়ায় এবারের বন্যায় সুপারি বাগানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। লক্ষ্মীপুরে মৌসুমে অনেক বেকার যুবক সুপারির ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রাম থেকে সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করলে প্রতি পোন সুপারি বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। তিনি আরও বলেন, ভিয়েতনামসহ বিদেশি উন্নত জাতের সুপারি চাষ করা সম্ভব হলে উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।লক্ষ্মীপুরজেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে উৎপাদিত সুপারি দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশেও বিখ্যাত। বন্যা না থাকলে সুপারির আরো ভালো ফলন হতো। এদিকে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামছুদ্দিন ফিরোজ জানান, বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবার সুপারি উৎপাদন কম হয়েছে, তবে দাম বেশি হওয়ায় চাষীরা খুশি। চলতি বছর ৩৬ হাজার মেট্রিক টন সুপারির উৎপাদন হয়েছে, যার বাজার মুল্য ৭শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে তুলতে বাগানীরা তাদের বাগানে সার প্রয়োগ, পরিচর্চা আর উন্নত চারা লাগানোর পরামর্শ দেন এ কর্মমকর্তা।