নিজস্ব প্রতিনিধি:
পৃথিবীতে মায়ের মতো মিষ্টি আর কিছুই নেই- এটা আমরা এক বাক্যে মানি। মা প্রত্যেক সন্তানের পরম আশ্রয়স্থল। সেই মায়ের চিরন্তন রূপকে খুব দক্ষতার সঙ্গে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রীরা। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা গুণী অভিনেত্রীদের মধ্যে আনোয়ারা, খালেদা আক্তার কল্পনা, ডলি জহুর, দিলারা জামান, শাবানা, সুচরিতা, ববিতা, রাশেদা চৌধুরী প্রমুখ অন্যতম।

ঢালিউডের অসংখ্য সিনেমায় মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আনোয়ারা। এই গুণী অভিনেত্রীকে পর্দায় দেশের অধিকাংশ নায়ক-নায়িকাদের মায়ের ভূমিকায় দেখা গেছে। মোট আটবার জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন তিনি। মা চরিত্রে অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো- ‘মায়ের স্বপ্ন, সমাধি’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, মায়ের চোখ, ‘দঙ্গা’, ‘রাধা কৃষ্ণ’, ‘ভাত দে’, ‘বর্তমান’ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’।

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। ৩৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২৯৯টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে প্রথমবারের মতো ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে মায়ের ভূমিকায় দেখা গেছে। এই সিনেমায় বেশ প্রশংসিত হন এই অভিনেত্রী। তবে মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন এমন সিনেমার সংখ্যা খুব বেশি নয়। তার দীর্ঘ কর্মজীবনে, তিনি অভিনয়ের জন্য ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১ বার প্রযোজক হিসাবে জিতেছিলেন এবং ২০১৭ সালে আজীবন পুরস্কারে সম্মানিত হন। বর্তমানে, তিনি অভিনয়কে বিদায় জানিয়ে স্থায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

ঢালিউড চলচ্চিত্রের আরেক জনপ্রিয় মা ডলি জহুর। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। অনেক দিন ধরেই মা হিসেবে দাপটের সঙ্গে ছোট ও বড় পর্দায় বিচরণ করছেন তিনি। কুলি, বাবা কেন চাকর, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, আনন্দের অশ্রু ও আমার মা, রাস্তার ছেলে, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, চাঁদের মতো বউ।

এছাড়া মায়ের ভূমিকায় আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী খালেদা আক্তার কল্পনা। মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। পর্দায় মা হিসেবে তিনি খুবই সফল অভিনেত্রী। সিনেমায় তার কান্না দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেক দর্শক। ১৯৮৯ সালে জিনের বাদশা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। মা চরিত্রে অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল- তিন কন্যা, আনন্দ আশ্রু, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, আমার প্রাণের প্রিয়া, ৭১ এর গেরিলা, পদ্মা মেঘনা যমুনা এবং জিনের বাদশা।

অভিনেত্রী দিলারা জামান ষাটের দশকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে মা হিসেবে পর্দায় জনপ্রিয়তা পান। ছোট পর্দায় বেশি অভিনয় করে মায়ের চরিত্রে বেশ খ্যাতি পেয়েছেন তিনি। তবে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রীকে বড় পর্দায়ও অভিনয় করতে দেখা গেছে।

ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচরিতা নব্বই দশকের শেষের দিকে মায়ের চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। চাষী নজরুল ইসলামের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। চলচ্চিত্রে দেশের জন্য নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করার দৃশ্য দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। সত্তর দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন ববিতা। ববিতা তার ক্যারিয়ারে ৩৫০ টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সাতবারের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে নিয়মিত মায়ের চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘মহামিলন’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘অবুঝ বউ’, ‘খোদার পর মা’, ‘মনের জ্বালা’,সবাইতো ভালবাসা চায়’, এবং ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না’। ‘ ২০১৬ সালে, তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে ভূষিত হন।

এছাড়াও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি, মায়া হাজারিকা, শর্মিলী আহমেদ, রেহানা জলি, শারমিন আক্তার, নূতন, শবনম, মিনু রহমান, অরুণা বিশ্বাস, সাবেরী আলম, রেবেকা, সাবিহা জামানসহ অনেক অভিনেত্রী।