বাংলাদেশ ঋণ খেলাপি হয়নি: বিশ্বব্যাংকে প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০১:২২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩ ৩৯ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংককে বলেছেন, বাংলাদেশ ঋণ খেলাপি হয়নি।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির বৃদ্ধির সুযোগ ও সক্ষমতা নির্দেশ করে। বাংলাদেশ কখনোই খেলাপি বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।
স্থানীয় সময় সোমবার (১ মে) সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে বিশ্বব্যাংকের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৫৩টি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ৩৯ বিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ঋণের অংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বহিরাগত চাপের কারণে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তে আমি হতাশ হয়েছিলাম” এবং বলেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যে মনোযোগী থাকতে হবে। আমরা এখন আমাদের অংশীদারিত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সম্পদে ছয় ও দশম কিলোমিটার পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচায়ক।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাংক সহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের আমাদের ডিজিটাল এবং ভৌত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।
“আমরা বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ প্রচার ও প্রচারণা এবং দেশীয় সম্পদ উৎপাদনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাই।”
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা, বিনামূল্যে ও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বিদ্যুতের প্রবেশাধিকারসহ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্যগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ, মানসম্মত শিক্ষা, শিশু কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে চাই।
বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অংশীদাররা বাংলাদেশের অগ্রগতির ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্বব্যাংককে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ বছর সারা বিশ্ব ভূ-অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে, যার প্রভাব বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। সেজন্য বিশ্বব্যাংককে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
তিনি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশ্বব্যাংকের বিশেষ ছাড়যোগ্য অর্থায়ন বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্বব্যাংকের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন বিশ্বব্যাংক দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে অনুদান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গাদের ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বিশ্ব যেন এই অসহায় মানুষগুলোকে ভুলে না যায়।
ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত আবাসনের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভাষানচর দ্বীপে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যার জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং উদীয়মান অর্থনীতি। তিনটি মানদণ্ডে যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ করেছে।
তিনি বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। কোভিড-১৯ মহামারী, ইউরোপে যুদ্ধ এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকটের কারণে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই অগ্রগতি এসেছে।
বাংলাদেশের তরুণরা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চিত, আমাদের তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বিদ্বেষ নয়’ এই বৈদেশিক নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক কুটনীতি অব্যাহত রাখবে।