ফারহানা তালুকদার পুতুল এর ছোট গল্পঃ আতঙ্ক
- আপডেট সময় : ০৮:৫২:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ৮৫৩ বার পঠিত

বাংলাদেশ কণ্ঠ ।।
মেয়েটি বসে আছে ফুলে ফুলে সাজানো বিছানার এক পাশে। কিন্তু তার নাসারন্ধ্র মনে হচ্ছে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।সে কোন ফুলের গন্ধ পাচ্ছে না।কারণ জ্বর তার ইন্দ্রিয়র কর্ম ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।তার গায়ে ১০২° জ্বর। আসলে তার গায়ে জ্বর নেই, জ্বর তার মস্তিষ্কে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিয়ের শপিং,ঘর সাজানো, আলপনা আঁকা, তাকে নিয়ে আত্মীয়দের আহ্লাদ, আপ্যায়ন আদর ভালোবাসা, বান্ধবীদের খুনসুটি শুনে শুনে ভয়ে আতঙ্কে নিদ্রাহীন রাত জেগে থাকা, এই জ্বর এর উৎস।
শশুর বাড়ীতে আজ তার প্রথম রাত।আজ দুপুরেই তার বিয়ে হয়েছে। প্রেমের বিয়ে নয়।একে বারে মুরব্বিদের পছন্দমত বিয়ে।
সে যাই হোক, জ্বর এর ঘোরেই হোক আর কল্পনার রাজ্যেই হোক, মেয়েটির মন স্মৃতিকাতর হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শৈশবের রাজা রানীর রুপকথার রাজ্যে, গল্পের মাঝে।
একি গল্প কিশোরী মনেও দোলা দেয় ।গল্পের রাজকুমার কে মেয়েটির মন খুঁজে বেড়িয়েছে যৌবনকাল অবধি।আর নিজেকে সে তার রুপকথার গল্পের রাজকন্যা হিসেবেই কল্পনা করেছে। কিন্তু আজ যে জায়া রুপে ধরা পড়ার দিন।
মেয়েটির ননদিনী,আর ননদের বান্ধবী তাকে এই ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
“ভাবী আজ থেকে এইটা তোমাদের রুম ”
রাত যতই বাড়তে ছে, মেয়েটির কাছে ঘরটিকে ঘর মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে বসে আছে পাবলিক পরীক্ষার রুমে।তার কেমেষ্ট্রী পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা প্রায় শেষ এর পর্যায়ে। কিন্তু তার কিছুই লেখা হয়নি।সে কিছু্ই পারছে না লিখতে।
তার কাছে মনে হতে লাগলো এখুনি পরীক্ষক রুমে ঢুকবেন দরজা ঠেলে, এসেই তার খাতা টেনে নিয়ে যাবেন।
সে তাকে কি বলবে??
তাকে কি বলবে, স্যার আমি কেমেষ্ট্রির হিস্ট্রি ,জিওগ্রাফি,ক্যালকুলাস সব ভুলে গেছি। এখন খাতাটা নেবেন না প্লিজ!!
ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা খোলার শব্দ হলো। মেয়েটি ভয়ে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেছে।
শৈশবের সেই রাজকুমার প্রথম যখন রাজকন্যার সাথে দেখা করতে আসে, তখন তার হাতে থাকে ফুল ….
কিন্তু মেয়েটির চীরচেনা গল্পের রাজকুমার এর হাতে কোন ফুল নেই,আছে এক পাতা নাপা টেবলেট।
শুনলাম আপনার নাকি জ্বর? লাস্ট ওষুধ খেয়েছেন কতক্ষন আগে?
মেয়েটির গলার স্বর বেরোচ্ছে না, তবু ও কষ্ট করে বলল,
দুপুর দুটোয়।
ছেলেটি বলল,
,” ওষুধ খাওয়ার আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে আরো চার ঘণ্টা আগেই। এখন তো আবার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে তাহলে। আমি তো শুনলাম এই বাসায় ঢোকার পর থেকে আপনি কিছুই খাননি।খালি পেটে ওষুধ গেলা কি ঠিক হবে??””
মেয়েটি নিরুত্তর।
রাজ্যের নিরবতা বিরাজমান ঘরময়। ছেলেটি কিসব কাগজ পত্র দেখায় ব্যাস্ত। হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে ছেলেটির প্রশ্ন,
” আপনি তো এম এস সি এর স্টুডেন্ট শুনেছি।দেখি বলেন তো বেনজিন এর সংকেত কি??””
প্রশ্ন শুনে মেয়েটির কল্পনার ঘোর কেটে গেল চিরতরে।গা থেকে জ্বর ও মনে হলো দৌড়ে পালাতে পারলে বাঁচে।
ক্ষীণ স্বরে মেয়েটি উত্তর দিল,সি সিক্স এইচ সিক্স…
আর মনে মনে ভাবতে লাগল,
ওরে রে!!!!??? আবারো কেমিস্ট্রি!!!!!!!?????
















