পোলট্রি খাতের অস্থিরতা তৈরির নেপথ্যে ভুঁইফোড় সংগঠন বিপিএ

- আপডেট সময় : ০২:২৫:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫ ৩১ বার পঠিত

বাংলাদেশ কণ্ঠ ।।
বিভিন্ন সময় ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার কারণে ভুগছে ভোক্তারা। এ অস্থিরতাকে এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) আরো উসকে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কথায় কথায় পোলট্রি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে সংগঠনটি। উৎপাদন এবং বাজারের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না থাকার পরও নানা মনগড়া তথ্য উপাত্ত দিয়ে ডিম এবং মুরগির বাজারকে অস্থিতিশীল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিপিএর কোনো নিবন্ধন নেই। তবে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার ইত্তেফাককে বলেছেন, নিবন্ধনের জন্য আমরা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে আবেদন করেছি। আশা করছি, খুব সহসাই রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাব। তবে নিয়ম অনুযায়ী কোনো বাণিজ্য সংগঠনের নিবন্ধন নিতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টও অব ট্রেড অগ্যানাইজেশন (ডিটিও) থেকে। সুমন হাওলাদের সংগঠনটি সেখানে এখনো আবেদন করেনি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সুমন হাওলাদার ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঘোষণা দেন, বড় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পোলট্রি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে আবারও ঘোষণা দেন, ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা লোপাট। একই বছরের আগস্টে ঘোষণা দেন, ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর ২০ দিনে ২৮০ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য দিয়েছেন। যার সবই তার মনগড়া বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, খামারিদের এ সংগঠনটির এখনো পর্যন্ত কোনো নিবন্ধন নেই, কতজন সদস্য তা কেউ জানে না। যদিও সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার দাবি করেছেন, তাদের এখন ১৮ হাজার খামারি সদস্য রয়েছে। যদিও দেশের এখন সব মিলে খামারের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ।জানা গেছে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ডিম ও মুরগির দামে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন সরকার সুমন হাওলাদারকে কাজে লাগায়। ভোক্তা অধিদপ্তর তখন সুমন হাওলাদারকে দিয়ে কম দামে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ডিম বিক্রি শুরু করে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে ডিম এবং মুরগির দাম নির্ভর করে চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর। উৎপাদন কম হলে এবং চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমে যায়। এখানে অন্য কোনো ম্যাকানিজম কাজ করে না।
পোলট্রি খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাগে আনতে ব্যর্থ হয়ে সুমন হাওলাদারকে দিয়ে তাদের চাপে রাখার কৌশল নিয়েছিলেন। শুধু সুমন হাওলাদার নয়, ভোক্তা অধিদপ্তর তখন গরুর মাংসের বাজার ঠিক করার জন্য খলিলকে দিয়ে ৬০০, ৬৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি, বাজার তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। একসময় বাধ্য হয়েই খলিল কম দামে মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ চরিত্রগুলো এখন আর নেই। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একবার তরমুজের বাড়তি দাম নিয়ে কথা উঠলে ঢাকার কয়েকটি স্থানে ন্যায্যমূল্যে তরমুজও বিক্রি করেছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সুমন হাওলাদার নিজ এলাকায় পোস্টার ছাপিয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য এলাকাবাসীকে অনুরোধও করেছিলেন।
পোলট্রি খাতের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অর্ডিনেশন কমিটি (বিপিআইসিসি) দাবি করছে, পোলট্রি খাতে প্রান্তিক খামারিদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান বড় বিনিয়োগ করেছে। এ বিনিয়োগ ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত করতেই একটি মহল সুমন হাওলাদারের মতো চরিত্র তৈরি করেছে, যা শিল্পের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এজন্য এ শিল্প সুরক্ষায় সুমন হাওলাদারের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় অনুসন্ধান, বিপিএর আইনি বৈধতা, সরকারের ভাবমূর্তি হুমকিতে ফেলার বিষয়গুলো তদন্ত করা উচিত। বিপিআইসিসি শিগগির তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে।
পোলট্রি খাতের সংগঠনগুলোর একটি ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বিপিএর কাজকর্ম এবং কথাবার্তা পুরোপুরি উদ্ভট। এ ধরনের চরিত্র শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। তার বিষয়ে সরকারের অনুসন্ধান করা উচিত। কারণ এ শিল্পে দেশি- বিদেশি ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। তারপরও বিপিএ প্রতিনিয়ত করপোরেটদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, যা মোটেও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।সুমন হাওলাদার ইত্তেফাককে জানান, তার সংগঠনে এখন ১৮ হাজার সদস্য। খামারিরাই তাকে বলেছেন খামার বন্ধের ডাক দিতে। তিনি খামার বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় এখন খামারিরা তাকে নানাভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন করছেন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে পোলট্রি খাতে ১ লাখের মতো ছোট-বড় খামার রয়েছে। যেখানে সরাসরি ২৫ লাখ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ লাখের বেশি মানুষ কাজ করছে। এ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি বছর দেশের পোলট্রি খাত থেকে ১১ লাখ টন মুরগির মাংস উৎপাদন হচ্ছে।