ঢাকা ০১:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?

বাংলাদেশ কণ্ঠ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩ ১৪২ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ সরব যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ নিয়ে কথা বলে আসছেন। সম্প্রতি মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতিও ঘোষণা করেছে। নতুন এই ভিসা নীতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা। তবে বিষয়টিকে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর পেছনে আরও কিছু ‘কৌশলগত হিসাব’ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন যুক্তরাষ্ট্র এত গুরুত্ব দিচ্ছে তা প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত এবং এখানে একটা খুবই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এখন দেখবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেখানে কী হয়।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন যে তিনি মনে করেন জো বাইডেন প্রশাসনের গণতন্ত্র প্রচারের এজেন্ডার উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে নেওয়া হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘বাইডেন প্রশাসন একটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক বৈদেশিক নীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি জোরদারভাবে প্রয়োগ করছে।’

একই কথা বললেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে- কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্র সেরকম কোনো ভূমিকা নেয়নি। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি মূল্যবোধভিত্তিক ছিল না। কিন্তু বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এবং তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বরে রেখেছেন।’

ডাঃ আনোয়ার বলেছেন যে এই প্রসঙ্গে নতুন ভিসা নীতির ব্যাখ্যা করা সবচেয়ে সঠিক হবে। বাইডেন সরকার যদি মনে করত বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক শাসন আছে, তাহলে অবশ্যই ঢাকাকে ডেমোক্রেসি সামিটে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের ক্র্যাকডাউনের সমালোচনা করছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে তারা কূটনৈতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নিতেও ইচ্ছুক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও অধিকার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানে যে চীন বাংলাদেশে অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাও দারুণ, এবং যুক্তরাষ্ট্র জানে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ভারত ও চীন উভয়ের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় এবং তারা যেন চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হয় তাও দেখতে চায়।

তাঁর কথায়, ‘ওয়াশিংটনে আজকাল কৌশল নিয়ে কথা বললে তা চীনের সাথে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখা হয়। আমি মনে করি অনেকেই যুক্তি দেবেন যে এই ধরনের নীতি (যেমন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ) বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ এটি ঢাকাকে চীনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে, অথবা বেইজিং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেইজিং ঢাকার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূল হবে না। বরং বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর যে কথা আছে- তার আলোকে একে দেখাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়।’

কেন বাংলাদেশের নির্বাচনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র?

আপডেট সময় : ০১:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ সরব যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ নিয়ে কথা বলে আসছেন। সম্প্রতি মার্কিন সরকার বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতিও ঘোষণা করেছে। নতুন এই ভিসা নীতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা। তবে বিষয়টিকে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর পেছনে আরও কিছু ‘কৌশলগত হিসাব’ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন যুক্তরাষ্ট্র এত গুরুত্ব দিচ্ছে তা প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত এবং এখানে একটা খুবই স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এখন দেখবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেখানে কী হয়।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন যে তিনি মনে করেন জো বাইডেন প্রশাসনের গণতন্ত্র প্রচারের এজেন্ডার উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে নেওয়া হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘বাইডেন প্রশাসন একটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক বৈদেশিক নীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি জোরদারভাবে প্রয়োগ করছে।’

একই কথা বললেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. আনু আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে- কিন্তু তখন যুক্তরাষ্ট্র সেরকম কোনো ভূমিকা নেয়নি। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি মূল্যবোধভিত্তিক ছিল না। কিন্তু বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এবং তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বরে রেখেছেন।’

ডাঃ আনোয়ার বলেছেন যে এই প্রসঙ্গে নতুন ভিসা নীতির ব্যাখ্যা করা সবচেয়ে সঠিক হবে। বাইডেন সরকার যদি মনে করত বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক শাসন আছে, তাহলে অবশ্যই ঢাকাকে ডেমোক্রেসি সামিটে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা দেখেছি বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের ক্র্যাকডাউনের সমালোচনা করছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে তারা কূটনৈতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নিতেও ইচ্ছুক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র ও অধিকার নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও প্রস্তুত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানে যে চীন বাংলাদেশে অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাও দারুণ, এবং যুক্তরাষ্ট্র জানে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ভারত ও চীন উভয়ের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায় এবং তারা যেন চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল না হয় তাও দেখতে চায়।

তাঁর কথায়, ‘ওয়াশিংটনে আজকাল কৌশল নিয়ে কথা বললে তা চীনের সাথে জটিলতার লেন্স দিয়ে দেখা হয়। আমি মনে করি অনেকেই যুক্তি দেবেন যে এই ধরনের নীতি (যেমন ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ) বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, কারণ এটি ঢাকাকে চীনের কাছাকাছি ঠেলে দিতে পারে, অথবা বেইজিং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেইজিং ঢাকার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূল হবে না। বরং বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর যে কথা আছে- তার আলোকে একে দেখাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়।’